Ticker

6/recent/ticker-posts

A short story of Disabled girl-প্রতিবন্ধী মেয়ে।

✋বশিরের তিন ছেলে-মেয়ে👎 এবং একমাত্র বউ নিয়ে তাদের সুখের আছর বাধা এক কালচার বিহীন সংসার। জীবন-জীবিকার খোজে প্রতিদিন বের হতে হয় কিন্তু সব দিন আর কাজ মেলে না। একা সংসার চালাতে কষ্ট হয় বিধায় আমার বউ অন্যের বাড়ি বা চায়ের দোকানে পানি টেনে কিছুটা সংসারের ঘানি টানে। কোনদিন কাজ না পেলে বউ-বাচ্চারা না খেয়ে থাকে কিন্তু কেউ যেন এই অভাবী পৃথিবীতে দেখার নাই।

সংসারের অভাবের তারনায় বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়েটাও সংসারের নানা কাজ করে। আমাদের এখানে টিউবল বা সরকারি বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা অনেক দুরে তাই সবাই পানি টানে এবং সেই পানি পরিবারের নানা কাজে ব্যবহার করে। তিন ভাইবোন ও পরিবারের পানি মেয়েটায় সংগ্রহ করে। তার ভাই দুটোও প্রতিবন্ধী।যেই এলাকায় থাকি এখানে এখনো সরকারি প্রতিবন্ধি ভাতা পৌছায় নাই, যদিও পৌছে থাকে তা আমাদের আয়ত্তের বাইরে।
 
একদিন এক দরদি লোক বাসায় এলো এবং দুরাবস্থার কথা শুনে কাদতে লাগল। এবং বলল যে আপনাদের তিনটি সন্তান প্রতিবন্ধী আমি আপনাদের প্রতিবন্ধী ভাতা করে দিবো। আমরাও খুশি হলাম । প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য ছবি , জন্মনিবন্ধন আরো অনেক কিছু নিল।উনি বলল যে কয়েক দিন পরে জানাবে। এই সমন্ধে খোজ নিতে প্রায় লোকটা আমাদের বাসায় আসতো । আমরাও তাকে পরিবারে একজন মনে করতাম।


বাশার ভাই আমার দুই ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে যেত  এবং সঠিক সময়ে ফিরে আসতো।আমার প্রতিবন্ধী ছেলেরাও বাশার ভাইয়ের উপর বেজায় খুশি থাকত। বাসায় ফিরে বশির ভাই আমাদের প্রতিদিনই বাজার করতে দু-তিন শত টাকা করে দিতেন। আমরা মানা করলেও জোর করে দিতেন। এটা দেখে উনার প্রতি আমাদের এমন একটা মায়া ও টান আসলো যে উনাকে ছাড়া আমাদের ভালো লাগতো না। উনার প্রেমে -ভালবাসায় আমরা সিক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। মন থেকেই উনার জন্য দোয়া চলে আসতো আল্লাহ উনাকে দীর্ঘ আয়ু দান করুক।
বাশার ভাই একদিন আমার মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চাইলো কিন্তু আমরা তাকে মানা করতে পারলাম না। রোনার বয়স তখন ১৩।রোনাও ঘরে বন্দি থেকে হাপিয়ে গিয়েছিল। আমরা কাজে চলে যাই ।সারাদিন বাসায় গান শুনে আর বাসার কাজ করে। এভাবে কতো দিন , স্কুলে ভর্তি করেছিলাম কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে রাখে নি। আমার প্রতিবন্ধীদের জন্য শিক্ষা কেন্দ্র আছে তা জানতাম না । তাই বাসায় বসে থাকে নিরলা আর কোথাও ঘূরতেও যায়তে পারে না। কেননা উকে কে নিয়ে যাবে সেই লোকও আমাদের নেই।প্রতিবন্ধীর বন্দি জীবন আর কতো দিন। ওর মন চায় খোলা আকাশে ,কাশবনের ফাকে , খেলার মাঠে যেতে। কিন্তু আমরা বাবা-মা হিসাবে উকে সেই সময় দিতে পারিনা।

বাশার ভাই রোনাকে নিয়ে ঘুরে ফিরে সঠিক সময়ে বাড়ি ফিরে এলো। আমরা আজকে মুরগির গিলা কলিজা রান্তা করেছি তাই ভীষনভাবে বাশার ভাইকে খেতে বললাম।বাজারে সস্তায় মুরগির গিলা কলিজা আলাদা ভাবে বিক্রি করে । মুরগির চেয়ে কম দামে পাওয়া যায়।এগুলো ভালো করে মশলা দিয়ে কসাইয়া রান্না করলে খাইতে মজা লাগে। তাই বার বার বাশার ভাইকে অনুরোদ করলাম। তিনি খেয়েছেন  এবং অন্য দিনের তুলনায় আজকে আমাদের দুইশত থেকে বাড়িয়ে পাঁচশত টাকা দিলেন। আগের মতোই জোর করে রোনার বাবার পকেটে গুজে দিলেন।

২ মাস পর

একদিন তার গ্রামের বাড়ির এক লোকের সাথে দেখা হলো এবং জানতে পারলাম বাশার ভাই নাকি গ্রাম থেকে পালিয়ে আসছে।সে বলছিল যে, গ্রাম্য শালিশে বাশারের গ্রামের বাড়ি যাওয়া নিষেদ  এবং গ্রামের বাড়িতে গেলে তাকে পাবলিক মাইর দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করার আদেশ আছে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম কেন? উনি উত্তরে বলল যে , উনি গ্রামের প্রতিবন্ধি মেয়েদের নিয়ে সাহায্য করার নামে তাদের দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তির কাজ করাতো , না করলে বাচ্চাদের মারধর করতো এবং পরে বাচ্চাদের নানা খেলনা বা টাকার লোভ দেখিয়ে ম্যানেজ করতো।
এই কথাগুলো শুনে আমি হতবাক হলাম কিন্তু এই দরদি মানুষটার নামে দুর্নামি কথাগুলো বিশ্বাস করলাম না। আমি বাসায় আসলাম এবং আমার মেয়ের কাছে জিজ্ঞাসা করলাম , তোমার বাশার কাকা তোমাকে ঘুরাতে নিয়ে গিয়ে তোমার সাথে কি করেছে। রোনা বলল যে , কাকাতো আমাকে নিয়ে শিশু মেলা , রেলস্টেশন, শিশু পার্ক এ ঘুরিয়েছে। মেয়ের থেকে কোন অভিযোগ পেলাম না কিন্তু আমার মনে কিছুটা খটকা লাগলো যে , ছেলেদের নিয়ে গেলে দুশত আর মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে গেলে পাচশত টাকা কেন দেয়। হয়ৎ বা তার মন ভালো বা আমরা গরীব বলে ।

একদিন বাশার ভাই আমার মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে গেল। আমিও তার পিছু নিলাম দেখলাম উনি সত্যিই স্টেশন, বাজার ও পার্কে ঘুরাঘুরি করল। আমি চলে আসলাম এবং আমার সন্দেহ কেটে গেল। পরদিন বাশার আমার মেয়েকে নিয়ে গেল , আর ফিরে এলো না। এভাবে কেটে গেল  দু-তিন মাস আমরা চিন্তায় পড়ে গেলাম  এবং থানায় জিডি করলাম। কিন্তু আমার মেয়েকে ফিরে পেলাম না।

পাঁচ মাস পর
রেলস্টেশনে রোনাকে খোজতে গিয়ে দেখি পাশেই গন্ডগোল হট্টগোলের মতো , কিছু লোকজন একজন লোককে মার-ধর করছে এবং পাশেই অজ্ঞান অবস্থায় রোনা পড়ে আছে। রোনাকে দেখে আমি মহাখুশি কিন্তু সেই সময় বাশারের রক্তমাখা মুখটা দেখতে পেলাম। আমার বাশারের গ্রাম্য প্রতিবেশির কথা মনে পড়ল।