গ্রামের বাড়ির কথা মনে পড়লে সবার মন কেদে ওঠে গ্রামের বাড়িতে যেতে কিন্তু আনিস গ্রামের বাড়ির পাশেই ধনুমিয়া স্কুলে নাইন ক্লাসে পড়ে। সে প্রতিদিন স্কুলে যায় এবং নিয়মিত পড়াশোনা করে ।
একদিন স্কুলে যাওয়ার সময় তার বন্ধু আতিকুল স্কুল ছেড়ে শহরে চলে গেছে । কেননা তার বাবা শহরে চাকরি পেয়েছে । এখন থেকে স্বপরিবারে গ্রাম ছেড়ে শহরে থাকতে হবে। আনিস বেশির ভাগ সময় তার বন্ধুর সাথে কাটাতো , স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে বন্ধুর কথা মনে পড়ে গেল কিন্তু তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি।
সে এখন একা স্কুলে যায় এবং বাড়ি ফিরে আসে । তার পড়াশোনার ফাকে ফাকে নিয়মিত ছবি আকতো ।একদিন সে তার বন্ধুর ছবি আকলো এবং দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখলো। তার গ্রামের দৃশ্যগুলো খুবই পরিচিত এবং নরমাল মনে হলো । সে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছে না।
সে মনে করে যে গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা না করে শহরে গিয়ে পড়বে। কিন্তু কোন জায়গা পেলনা। একদিন তার মামা বাবর আলী শহর থেকে তাদের বাসায় বেড়াতে আসলো । তখন সে তার মামাকে বলল গ্রামের স্কুলে ভালো পড়ালেখা হয়না । মামা আমাকে শহরে নিয়ে যাবে।
মামা বলল শহুরে জীবন চার দেওয়ালে মাঝে বন্দি জীবন ঐখানে তুমি টিকতে পারবে না। আনিস বলল মামা গ্রামে আর থাকতে মনে চায়না আমি শহরে পড়ালেখা করে একদিন অনেক বড় একজন মানুষ হয়ে গ্রামে ফিরে আসবো। কিন্তু আনিসের মা আয়েশা বেগম ছেলেকে শহরে দিতে রাজি হলোনা।কিন্তু আনিস শহরে যেতে দৃঢ়পণ করে নিল।
নাছোড়বান্দা ভাগনেকে শহরে নিয়ে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিল । সে শহরের দৃশ্যগুলো দেখে মুগ্ধ হলো এবং বলতে লাগলো অনেক উচু উচু বিল্ডিং এবং বাগানের সমারোহে সুসজ্জিত শহর। আনিস মামাকে বলল , জাতীয় সংসদ ভবন ও স্মৃতি সৌধ যাবো , টিভির পর্দায় দেখেছি এবং বইয়ের পাতায় পড়েছি। মহান মুক্তিযোদ্ধের ও স্বাধীনতার গল্পগুলো নিজ চোখে দেখে আসবো, বইয়ের পাতার গন্ডি থেকে বের হতে চাই ।
মামা বলল যে, এখন কাজে যাবো , সময় পেলে নিয়ে যাবো। কিন্তু মামার সময় পেল না এসব দেখানোর । শহরের মানুষের জীবনের চেয়ে সময়ের মুল্য বেশি ,তারা মনীষীদের কথা উলট-পালোট করে । আসলেই শহরের মানুষ যান্ত্রিক মানবে পরিনত হয়েছে। যন্ত্র চলে শহরের মানুষ চলে।
এদিকে আনিস বাড়ি থেকে স্কুল আর স্কুল থেকে বাড়ি এই গন্ডির বাইরে যেতে পারে না। বাড়িতে এসে চার দেওয়ালের মাঝে থাকেতে হয়। তার কোন সমবয়সী মামাতো ভাই-বোন নেই । তার মামি গার্মেন্টসে কাজ করে । সকালে একবার রান্না করলে সেটায় চলে সাড়াবেলা । মামিরও সময় হয়না ভাগনেকে বেড়াতে নিয়ে যেতে। একদিন আনিস নিজেই বাসা থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ দেখার জন্য বেড়িয়ে পড়ল । কিন্তু পথিমধ্যে তার শহরে এক কেউকাটা তার মানি ব্যাগ চুরি করে নিল।
তখন বাস ড্রাইভার কে সে বলল স্মৃতিসৌধ যাবো কিন্তু টাকা নেই । ড্রাইভার বিনা পয়সায় স্বাধীনতার সপ্ন দেখাতে রাজি হলো এবং নিয়ে গেল । সেই স্থানে যাওয়ার সময় তার সারা শরীর শিহরিত এবং অজানা এক যুদ্ধের চিত্র মনে ভেসে উঠল। তাই স্মৃতিসৌধের গেটের সামনেই অজ্ঞান হয়ে পড়ল। মানুষের জমে গেল । কিন্তু কেউ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে সাহস করল না । এভাবেই কেটে গেলে একদিনে-রাত। হঠাৎ তার জ্ঞান ফিরে দেখলো তার পাশে কেউ নেই। নিষ্ঠর শহরে খুবই একা মনে হচ্ছিল, সে তার মামার বাড়ির সন্ধান করছিল কিন্তু পেল না। কারন ঐ সময় বাংলাদেশ ডিজিটাল এবং তথ্য প্রযুক্তিতে অনেক পিছিয়ে ছিল । তখন সে কোন উপায় না পেয়ে এক ইটভাটায় কাজের সন্ধানে গেল এবং ইটের ভাটায় কাজ পেল যা কোন দিন সে কল্পনা করেনি ।
এদিকে তার মামা এবং তার পরিবার তার খোজে-খবরের জন্য পত্রিকায় সংবাদ ছাপালেও পায়নি আনিসের সন্ধান কেননা সেই সময় পত্রিকা খুব কম মানুষই পড়ত। এভাবে আনিসের কেটে গেল দুই তিন বছর , কঠোর পরিশ্রমে শহরে জীবন সম্পর্কে সে অনুধাবন করতে পারলো , আসলো শহুরে জীবনে শ্রমজীবী মানুষের মূল্য কোথায়?
এদিকে তার মামা এবং তার পরিবার তার খোজে-খবরের জন্য পত্রিকায় সংবাদ ছাপালেও পায়নি আনিসের সন্ধান কেননা সেই সময় পত্রিকা খুব কম মানুষই পড়ত। এভাবে আনিসের কেটে গেল দুই তিন বছর , কঠোর পরিশ্রমে শহরে জীবন সম্পর্কে সে অনুধাবন করতে পারলো , আসলো শহুরে জীবনে শ্রমজীবী মানুষের মূল্য কোথায়?
কঠোর পরিশ্রমে যখন তার দেহ অচল হয়ে পড়ল তবুও ইট ভাটা মালিক তাকে কাজ করতে বাধ্য করল
কেননা সে চুক্তি ভিত্তিক কাজ পেয়েছিল। 😰😨একদিন লাশ
হয়ে বাড়ি ফিরে এলো বাবা-মার আদরের পুতলি আনিস। গ্রামেই তাকে সমাহিত করা হলো।😭